হাসিনা-এসকে সিনহার বিরুদ্ধে সুখরঞ্জন বালির অভিযোগ

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি তার অপহরণ, গুম এবং নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। এই ঘটনায় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারপতি একেএম ফজলে কবিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

 

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসে হাজির হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগে সুখরঞ্জন বালি উল্লেখ করেন, ২০১২ সালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তিনি আদালতে গিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশার বিপরীতে সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। এই ঘটনার পরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রাঙ্গণ থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান।

 

সুখরঞ্জন বালি জানান, তাকে সেদিন অপহরণ করা হয় এবং একটি গাড়িতে পুরো দিন আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়। এরপর রাতে তাকে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

 

তিনি আরও জানান, বিএসএফ তাকে আটক করে দুই মাস ১৭ দিন গুম করে রাখে এবং পরে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে ভারতের একটি কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে তাকে প্রায় এক বছর কারাবাসে থাকতে হয়। এই পুরো ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

সুখরঞ্জন বালির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ পারভেজ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তার মক্কেল যে চারজনকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করছেন, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্বে থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আমার মক্কেল একজন নিরীহ নাগরিক, যাকে সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে অন্যায়ভাবে গুম করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং দীর্ঘ সময় বিদেশের মাটিতে আটক রাখা হয়েছে। আজ তিনি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

 

অভিযোগপত্রে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ছাড়াও ঘটনার সময়, স্থান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচয়, প্রমাণ ও ব্যাখ্যা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিস জানিয়েছে, অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেটি যাচাই-বাছাই শেষে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে সাক্ষ্য দিতে এসে সুখরঞ্জন বালি নিখোঁজ হন। পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এবং মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তিনি ভারতের একটি কারাগারে আটক রয়েছেন।

 

অনেক বছর নিখোঁজ থাকার পর তিনি দেশে ফিরেন। দেশে ফিরে দীর্ঘ সময় নীরব থাকার পর এবারই প্রথম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করলেন।

 

তিনি মনে করেন, এই ঘটনার বিচার হওয়া উচিত এবং তার অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আন্দোলন কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না : রিজভী

» হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেন নুরুল হক নুর

» দোহায় তৌহিদ হোসেন-ইসহাক দার বৈঠক

» বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত ঢাকা

» যমুনা অভিমুখে প্রাথমিক শিক্ষকরা, পুলিশের জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

» জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে: আসিফ মাহমুদ

» নবীর আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করে জীবন গঠন হবে ….. জেলা প্রশাসক নরসিংদী 

» ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের উত্তরা ক্যাম্পাসে ইয়াং লার্নার ইংলিশ লার্নিং সেন্টার-এর নতুন শাখা চালু করল ব্রিটিশ কাউন্সিল

» ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর অধীনে ব্র্যাক ব্যাংকের দেশব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা প্রোগ্রাম আয়োজন

» নওগাঁয় ডিবি পুলিশের অভিযানে মাদক কারবারি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ আটক ৩

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হাসিনা-এসকে সিনহার বিরুদ্ধে সুখরঞ্জন বালির অভিযোগ

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি তার অপহরণ, গুম এবং নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। এই ঘটনায় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারপতি একেএম ফজলে কবিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

 

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসে হাজির হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগে সুখরঞ্জন বালি উল্লেখ করেন, ২০১২ সালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তিনি আদালতে গিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশার বিপরীতে সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। এই ঘটনার পরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রাঙ্গণ থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান।

 

সুখরঞ্জন বালি জানান, তাকে সেদিন অপহরণ করা হয় এবং একটি গাড়িতে পুরো দিন আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়। এরপর রাতে তাকে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

 

তিনি আরও জানান, বিএসএফ তাকে আটক করে দুই মাস ১৭ দিন গুম করে রাখে এবং পরে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে ভারতের একটি কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে তাকে প্রায় এক বছর কারাবাসে থাকতে হয়। এই পুরো ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

সুখরঞ্জন বালির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ পারভেজ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তার মক্কেল যে চারজনকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করছেন, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্বে থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আমার মক্কেল একজন নিরীহ নাগরিক, যাকে সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে অন্যায়ভাবে গুম করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং দীর্ঘ সময় বিদেশের মাটিতে আটক রাখা হয়েছে। আজ তিনি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

 

অভিযোগপত্রে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ছাড়াও ঘটনার সময়, স্থান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচয়, প্রমাণ ও ব্যাখ্যা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিস জানিয়েছে, অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেটি যাচাই-বাছাই শেষে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে সাক্ষ্য দিতে এসে সুখরঞ্জন বালি নিখোঁজ হন। পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এবং মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তিনি ভারতের একটি কারাগারে আটক রয়েছেন।

 

অনেক বছর নিখোঁজ থাকার পর তিনি দেশে ফিরেন। দেশে ফিরে দীর্ঘ সময় নীরব থাকার পর এবারই প্রথম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করলেন।

 

তিনি মনে করেন, এই ঘটনার বিচার হওয়া উচিত এবং তার অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com